“অচেনা”

অচেনা

অচেনা

অচেনা

সময়ের অন্তরালে কতটা সব কিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব তা তো জানা সম্ভব নয় । কিন্তু কোনো জানি না আমার ব্যাক্তিগত ভাবে মনে হয় সময়ের অন্তরালে সময় যখন মানুষের চোখে ধরা দেয়, তখন আসে আবেগ আর আবেগ সঙ্গে নিয়ে আসে প্রেম কে।

প্রথম প্রেম মানুষের জীবনে অনেকটা Maaza drinks এর বোতলের মধ্যে থাকা আমের রসের মতো যেখানে স্বাদ এবং গন্ধ দুই বর্তমান , আর দ্বিতীয় প্রেম হলো খালি maaza বোতলে জল ভোরে খাওয়ার মতো ,যেখানে গন্ধ আছে কিন্তু স্বাধ নাই ,

তবুও আমরা খুশি ।

মানুষের চোখে হাজার একটা স্বপ্ন নেমে আসে বা বলা যায় সে দেখতে শুরু করে ,প্রথম দেখা নারী যাকে দেখে মনে হয়েছিলো,কোথায় ছিলে এত দিন ,আগে কেন তোমায় দেখিনি ,তুমি তো সেই যার জন্য আমি এতদিন অপেক্ষা করেছিলাম ।কিন্তু স্বপ্ন তো স্বপ্নই থেকে যায় কারণ স্বপ্ন আর মরীচিকার মধ্যে পার্থক্য খুব কম । যাই হোক।

কলেজ সবে শেষ হয়েছে ,চোখে অনেক স্বপ্ন আমাদের। আমার বন্ধু আশীষ ,প্রথম প্রেমে আঘাত খেয়ে ঠিক করেছে সে প্রেম নামক বস্তুটা থেকে অনেক দূরে থাকবে এবং সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা করবে । কিন্তু যে মানুষ একবার প্রেম এর স্বাদ বোঝে সে বার বার প্রেম পাগল রোগে আক্রান্ত হয়। সেইদিন আমাদের মোটামুটি ছুটি ছিল । বিকেলে গঙ্গারধারে আড্ডা দিতে দিতে হটাৎ ঠিক হয়ে গেল পরের সপ্তাহে মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ দেখতে যাবো । টিকিট কোথায় পাবো ভাবতে ভাবতে হটাৎ মনে পড়ে গেল আমাদের কলেজ এর এক দাদার কথা , যে একটা সময়ের আমাদের কলেজ এর hero ছিলো। নাম অতনু ব্যানার্জী। অতনু দা কে ফোন করা হলো । অতনু দার দয়াতে পরের সপ্তাহের ম্যাচ এর 5টা টিকিট জোগাড় হয়ে গেল ।

আমরা 5 বন্ধু পাঁচ ধরনের , প্রতিটা বিষয়ে আমাদের মধ্যে কেউ একজন মতবিরোধ করে । আজ হয়তো আশিস এর পালা ছিল। আমরা চার বন্ধু ছিলাম মোহনবাগান এর প্রেমিক আর আমার বন্ধু ছিল ইস্টবেঙ্গল এর প্রেমিক । যাই হোক যার যার ব্যক্তি গত মতামত।

ম্যাচ এর আগের দিন গুলো যে কিভাবে কাটলো ভগবান জানে ,তবে আশীষ কে নিয়ে বড্ড মজা করা হয়ে গেছিল। ম্যাচের দিন আমরা সবাই স্টেডিয়ামে বসে মোহনবাগান মোহনবাগান করে চেঁচাচ্ছি , মনে হচ্ছে এটা দল নয় একটা মানুষ যার জন্য আমরা সব কিছু করতে পারি। অন্যদিকে আমার বন্ধু চুপ করে বসে। আশীষ খেয়াল করে নি , ওর পাশে একটা অদ্ভুত সুন্দর দেখতে মেয়ে মোহনবাগান মোহনবাগান করে চিৎকার করছে ।হটাৎ মেয়েটা আশীষ এর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো – শরীর খারাপ? না, হারবে বলে চুপ করে মুখ লুকিয়ে বসে আছো ? আশীষ খুব নরম স্বভাবের ছেলে ,দেখলে বোঝা যায়। আশীষ বললো – না, আমি ভাবছি এত গুলো মোহনবাগান সমর্থকদের মাঝখানে যদি আমি চিৎকার করি তাহলে মাঠের কোথাও আমার শব্দ পৌঁছনো তো দূরে থাক বরং আমার গলায় বেথা হবে। মেয়েটা হেসে বলেছিল – দল যখন তোমার ,মনে মনে যখন ভালোবাসো তখন হোক না একটু গলায় ব্যাথা, কি হবে এত ভেবে। হটাৎ আশীষ তো অবাক ,তারপর আশীষ কে মেয়েটা হটাৎ নাম জিজ্ঞেস করলো । তারপর আশীষ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটা গরগড়িয়ে বলতে শুরু করলো , যেমন মোহনবাগান কতটা প্রিয়,মোহনবাগান এর খেলা দেখার জন্য সে কিভাবে পাগলামো করে ,এমন কি সে মোহনবাগান কে কতটা পছন্দ করে,কোন বন্ধুর সাথে মোহনবাগান কে নিয়ে যুদ্ধ করেছে , কিন্তু একটা জিনিস বলতে ভুলে গেছিলো সেটা হলো তার নাম। মাঝখানে একবার থেমে ছিল একটা প্রশ্ন করার জন্য আশীষ কে – সে গল্প লেখে কিনা? আশীষ উত্তর দিয়েছিল হ্যাঁ , কিন্তু তুমি জানলে কি করে!!! উত্তরে বললো , জানিনা মনে হলো । আশীষ কোথায় যেন মেয়েটার মায়াতে জড়িয়ে পড়ছিল। কিন্তু বার বার মন কে বোঝাচ্ছিলো তার জন্য প্রেম ঠিক নয়। সেইদিন সময় টা কোথাও থমকে গেছিল। সেইদিন যেন আশীষ বার বার মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে যাচ্ছিল ।

খেলার সময় যতই এগোতে লাগলো আশীষ এর মধ্যে মোহমায়া বাড়তে শুরু করলো । সেইদিন ইস্টবেঙ্গল প্রেমিক এর মুখ থেকে বেরতে যাচ্ছিল একটাই শব্দ – তুমি কি আমার হবে? যত্ন করে রাখবো তোমায় ।অন্য দিকে ঘড়ির কাটা সমস্ত ঘর্ষন জনিত বাধা কে উপেক্ষা করে দৌড়ে চলেছে ।আর আমার বন্ধু নিজের মন কে বার বার প্রশ্ন করছে এই মেয়েটার সাথে কি এটাই শেষ দেখা ।

খেলা শেষ বাড়ি ফিরছি ,আশীষ এর মন খুব খারাপ , কারণ যে নারীর তার মনে আজ উকি দিয়েছে খেলার মাঠে সেই নারী যে আজ আবার রাস্তায় পথ চলতে চলতে তার মনে উকি দিচ্ছে । রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আমরা চার বন্ধু চা খাচ্ছি । হটাৎ বৃষ্টি , আশীষ দৌড়ে বাস স্ট্যান্ড পৌঁছালো, রুমাল দিয়া মাথাটা মুছতে যাবে হটাৎ একটা চেনা আওয়াজ- কি ইস্টবেঙ্গল বাবু ছাতা কোথায় ? আশীষ অবাক। মাঠে দেখা সেই মেয়ে যাকে, দেখে মনের গোলপোস্টে বার বার আশীষ পেনাল্টি তে গোল খেয়েছে । আশীষ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তুমি এখানে ? উত্তর দিলো – বাবা আসবে নিতে। এরপর হটাৎ চুপ দুজনই । এরপর মেয়েটা বললো চা খাবে ? আশীষ উত্তরে বলেছিল ,খেতে পারি তবে তুমি যদি চায়ের সাথে প্রজাপতি বিস্কুট দিতে রাজি থাকো। সেইবলে দুজনে, পাশের চায়ের দোকানে চলতে লাগলো, একই ছাতার তলায় । হটাৎ মেয়েটা বললো আশীষ কে – আমার ছাতা আছে তাই তুমি রক্ষে পেলে ,পরে কি করবে ? আশীষ – জানিনা গো । আশীষ এর মন বলছে আজ যদি তোমার পথের সঙ্গী করে নাও আমায় খুব কি ক্ষতি হবে , কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছে না। হটাৎ মেয়েটা বলে বসলো – তুমি আমার ছাতাটা নিয়ে যাও। আমি তো বাবার সাথে বাড়ি যাবো কোনো অসুবিধা হবে না। আশীষ বললো তাহলে তোমার ছাতা ফেরত দেব কি করে? মেয়েটা উত্তরে বলেছিল – তোমার ফোনটা একটু পেতে পারি , বলে ফোনটা নিয়ে ফোন নাম্বারটি লিখে দিল, আর বললো আমায় মিসকল দাও । আশীষ মিসকল দিতে না দিতেই , গাড়ির হর্ন বেজে উঠলো মেয়েটা চলে গেল ।

আমরা তো বাস স্ট্যান্ড আশীষ কে না দেখতে পেয়ে অবাক। তারপর মহাপুরুষ কে খুঁজে পাওয়া গেলো পাশের চায়ের দিকানে , বাবু টাকা দিচ্ছেন দোকানদার কে । আমরা বললাম চা খাবার যখন এতই ইচ্ছা ছিল আমাদের সাথে খেতেই পারতিস। আশীষ হেসে বললো – হেরে গেছি তো মাঠে তাই আজ তোদের সাথে খেলাম না।

বাস ধরে বাড়ি ফিরছি, আশীষ জানলার ধরে বসে , একটু চুপ । কোথাও যেন ছেলেটা হারিয়ে গেছে । হটাত আশীষ এর ফোন এর মেসেজ রিংটোন বেজে উঠলো । দেখলো unknown মেসেজ করেছে । আশীষ নাম টা unknown বলে save করে রেখেছিল । লেখা ছিল –“ কাল যদি সত্যি ফাঁকা থাকো আর যদি তুমি আমাকে চা খায়নোর সুযোগ দাও তাহলে বেলা বারোটায় কলেজ স্ট্রিট এর মোড়ে চলে আসবে , আমি থাকবো আর সঙ্গে আমার নাম বলবো । ইতি অচেনা ।“

এরপর আশীষ মাঠে হেরে গিয়ে বাস স্ট্যান্ডে জিতবার আনন্দে মেতে উঠলো হটাৎ , আর জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে চেনা শহর কে দেখলো অচেনা নারীর স্পর্শে।।।।।।

 

Leave a Reply

Related Post

কিছু ক্ষন পর রিপ্লাই এলো " eyeliner "

কিছু ক্ষন পর রিপ্লাই এলো ” eyeliner “কিছু ক্ষন পর রিপ্লাই এলো ” eyeliner “

কিছু ক্ষন পর রিপ্লাই এলো  “eyeliner” তখন রাত ২:৪৫ ড্রেসিং টেবিলের প্ল্যানটা সবে শেষ হলো। তার সাথে কথা বলতে বলতে কিছুক্ষন চুপ করে গেছি পরের আঁকা শুরু করতে। রিপ্লাইটা পেতে

” ফিরে পাওয়ার সময় ফেরেনি, বসন্ত ফিরেছে বহুবার! “” ফিরে পাওয়ার সময় ফেরেনি, বসন্ত ফিরেছে বহুবার! “

” ফিরে পাওয়ার সময় ফেরেনি, বসন্ত ফিরেছে বহুবার! “ সারা জীবন ধরে মায়ের দোষ,শুনে আসা একলা মেয়েটারও একটা আত্মকথা থাকতে পারে সেটা বোঝে না অনেকেই। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বাবার মুখের

খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়??

খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়??খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়??

খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়?? রোজ রাতে কাজ সেরে টলতে টলতে ক্লান্ত জীর্ণ শরীরটা যখন বাড়ি ফেরে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে, ঠিক তখনই চোখ রাঙানি দিয়ে ওঠে সমস্ত না

%d bloggers like this: