অনুভূতি True Story ব্যস্ত শহরের আনাচে-কানাচে আজও প্রজ্জ্বলিত বিহান হিয়ার স্মৃতিরা !

ব্যস্ত শহরের আনাচে-কানাচে আজও প্রজ্জ্বলিত বিহান হিয়ার স্মৃতিরা !

ব্যস্ত শহরের আনাচে-কানাচে আজও প্রজ্জ্বলিত বিহান হিয়ার স্মৃতিরা !

ব্যস্ত শহরের আনাচে-কানাচে আজও প্রজ্জ্বলিত বিহান হিয়ার স্মৃতিরা !

ব্যস্ত শহরের আনাচে-কানাচে আজও প্রজ্জ্বলিত বিহান হিয়ার স্মৃতিরা !

বিহান আবারও চায় তার সাথে একবার দেখা হোক হিয়ার, তারা দুজনে আবার তাকাবে দুজনের দিকে চেনা গন্ধে সম্মোহিত হবে দুজনে আবার। ঢাকুরিয়া স্টেশনের প্লাটফর্মে বসে ভাবতে ভাবতে ডাউন শিয়ালদা র ট্রেন ঢুকলো, প্রথম লেডিস চলে যেতেই আবার চোখ ফিরিয়ে তাকালো। তারপর যা হলো তাতে বিহানের সারা শরীর আলোড়িত হয়ে উঠলো। হ্যাঁ হ্যাঁ সে হিয়াকেই দেখলো। আবারও ওর ইচ্ছা পুর্ণ হলো কিন্তু অদ্ভুত একটা ব্যাপার সেটা হলো, ও চেয়েছিল দুজনেই দুজনকে দেখবে, ইতিপূর্বে বিহানের দিকেও তাকিয়েছিল হিয়া কিন্তু সেই তাকানোর মধ্যে ছিল কিছু প্রশ্ন অনেক দিন ধরে হয়তো জমে আছে তার মনে। কিন্তু তার কোনো কথা শুনতে চায়না বিহান। কারণ ও এখন চায় শুধু হিয়া কে আঘাত করতে , তাকে দেখতে যে সে কত ভালো আছে তাকে ছাড়া। কিন্তু অন্যদিকে বাড়ির চাপে বিয়ে করতে রাজি হওয়া হিয়া নিজেকে দোষারোপ করতে থাকে এটা ভেবে যে তার জন্য বিহান কষ্ট পেয়েছে। শুধু একটিবার তার সাথে দেখা করতে চায় হিয়া। অনেক কথা জমে আছে তার বুকে সেগুলো বলে হালকা হতে চায় হিয়া।
ব্যস্ত শহরের আনাচে-কানাচে আজও লেগে থাকে বিহান হিয়ার স্মৃতিরা। স্বামীর হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে হিয়া যখন রবীন্দ্র সরোবরের লেকের ধারে এসে পৌঁছায় তখন তার মনে পড়ে সেই জীবনের প্রথম চুম্বন টা বিহানকে এখানেই করেছিল। কত সময় কেটেছে ওদের হাতে হাত রেখে ঢাকুরিয়া লেক তাঁর সাক্ষী জীবনের কত উঠানামা লেলিহান শিখার মত এখানেই ওরা নিজেদের সমস্যা সম্পন্ন করেছে। কলেজের বেঙ্গলি ক্লাস বাঙ্ক করে সেই সাউথ সিটি মল, যাদবপুর কলেজ স্ট্রীট, কফি হাউস, ঘুরেছে তারা। সেদিন বড্ড অসস্তি লাগছিল হিয়ার, চেনা জায়গা, চেনা মল, চেনা লেক শুধু পাশে দাঁড়ানো মানুষটা অচেনা। কিইবা করবে সে রাশভারী সম্মানীয় হাই স্ট্যাটাস বিলং করা বাবার মুখের উপর কথা বলতে পারেনি সেদিন। পিসিরা অবশ্য পালিয়েই বিয়ে করেছে তাই মায়ের কড়া শাসন পিসি দের মত নিজের মেয়েকে তলিয়ে যেতে দেবে না। তাই গ্রাজুয়েশনের পরে উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি করা একটু বয়স্ক ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে বাবা মা নিজের মতন মেয়ের জীবন সুরক্ষা করতে চায়।
ওদিকে টিউশন পরিয়ে অল্প পয়সা রোজগার করা মধ্যবিত্ত ছেলে বিহান সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে বেড়ায় এদিকে ওদিকে কিন্তু জেনারেল কোটায় কেটে যায় অর্ধেক চাকরি। শেষ পর্যন্ত কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি হিয়ার, একদিন ওই ঢাকুরিয়া লেকের ধারেই বসে বিহান হিয়াকে কথা দিয়েছিল যে গ্রাজুয়েশনের পর সে সরকারি চাকরি পাবেই গ্রেডও ছিল অনেক বেশি। চঞ্চল হাসিখুশি চাপদাড়ি ওলা ছেলেটা সারা কলেজের সামনে মনের কথা বলেছিল হিয়াকে, স্বপ্ন দেখিয়েছিল আরো অনেক বসন্ত পেরোবার হাতে হাত রেখে পাড়ি দেবে জীবনের বাকি ৬০টা বছর। এত জটিলতা ছিল না তার জীবনে বাবা ব্যাংকে চাকরি করেন মা গৃহবধূ আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলের মতন বড় হয়ে উঠে বিহান। আস্তে আস্তে গ্রাজুয়েশন শেষের পথে চাকরির পরীক্ষায় বসার জন্য টিউশন নিতে শুরু করে। গ্রাজুয়েশন রেজাল্ট এর দিন ফোন করে হিয়া, আর বলে ‘তোর সাথে আর ৬০ টা বসন্ত পেরোনো হবে না বিহান। বাবা আমার জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছে আর পরের বছরের মধ্যে আমার বিয়ে হয়ে যাবে তুই কি আমাকে দেওয়া তোর কথা রাখতে পারবি? যদি পারিস তাহলে আমার বাবার সাথে এসে কথা বল আমার সাহস নেই বাবার মুখোমুখি দাঁড়ানোর’ সেদিন উত্তর দেওয়ার মতন কোন ভাষা খুঁজে পাইনি বিহান; তাই শুধু একটাই কথা বলেছিল ‘ দেখ হিয়া, আমি তোকে আগেও বলেছি একটা সরকারি চাকরি না পেলে তোর বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে আমি জোর পাচ্ছি না এখন তুই ঠিক কর তুই কি করে বিয়েটা আটকাবি, যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকিস তাহলে অপেক্ষা কর আমি ঠিক তোর কথা রাখবো আর যদি না বাসিস তাহলে তুই তো রাস্তা দেখে নে ‘ এই বলে ফোন কেটে দেয় বিহান। ওটাই ওদের শেষ কথা। হাজার চেষ্টা করেও হিয়া বিয়ে আটকাতে পারেনি আর বিহানের মুখোমুখি হতে পারেনি। উল্টো দিকে বিহানের অভিমান বাড়তে থাকলো, সে ভাবলো হিয়া লোভী তাই বড় লোক বরের সাথেই বিয়ে করেছে সে, তাকে ঠকিয়ে। ডাইরি টা বের করে দুটো লাইন লিখলো ” অবুঝ ভীষণ সময় ঘড়ি শুধু খুঁজতে চায় কারন,
আবেগ গুলোর ডানা মেলতে কোথায় যেনো বারন ”
খায় না, ঘুমোয় না, বিভীষিকা যেনো রাত চোখ দুটো বুজলেই ভেসে ওঠে নরম দুখানি হাত। ভুলতে চায় সে হিয়াকে, বড্ডো ভালোবাসে তাকে। আর হিয়া ? ও কি একটুও ভাবে না পুরনো কথা ? এত সহজে ভুলে গেলো তার ‘ বিহু ‘ কে! তাহলে সব কিছুই মিথ্যে ? যত দিন কাটতে থাকে বিহানের রাগ বাড়তে থাকে আর হিয়া একটা ফোন এর আসায়। দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে যায়, পরের বৈশাখে হিয়ার বিয়ে। পাত্র যতীন্দ্র সরকার, ইনকাম ট্যাক্স অফিসার, হলদিয়ায় পোস্টিং, বাড়ি কলকাতা। বাড়ির সবাই খুব খুশি তাদের খুশি রাখার জন্য হিয়াকেও খুশি থাকতে হল জোর করে।
বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তার খবর পেয়েছে বিহান। তাদেরই কলেজের বন্ধু বিয়েতে গিয়ে ফটো দেখিয়েছিল। সুন্দরী লাগছিল হিয়াকে বিয়ের পোশাকে, বললো বিহান। তারপর নিজের সংসার গোছাতে হিয়া ব্যস্ত হয়ে পরে স্বামী সংসার নিয়ে চলে যায় হলদিয়া। আর কোন যোগাযোগ হওয়ার সূত্র ছিল না। এভাবে কেটে যায় ৫টি বছর।
এত বছর পর আবার সেই নাড়ীকে দেখে তার মনে প্রতিশোধ জেগে উঠলো। সে চেয়েছিলো আর একবার যদি হিয়া ফিরে আসতে চায় সে অপমান করবে ঠিক তেমন ভাবে যেমন ভাবে তাকে ছেড়ে চলে গেছিলো হিয়া। তাই আজও বড্ডো অভিমানী। ক্ষোভ উগরে দেওয়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছিল না। হৃদয় আর বলে উঠতে পারেনি তার মনের ব্যাথার কথা সমান্তরাল ভাবে ভুল বুঝে গেলো বিহানও। সেদিন বাড়ি ফিরে আবারও কবিতার খাতাটা খুলে বিহান লিখলো ” তুমি তো ব্যস্ত তোমার জীবনে আমি তো নগন্য অপ্রাসঙ্গিক সম্পর্কের আবার সাহস অদম্য ”

না বলা কথা গুলো চেপে রেখে অঝোরে কাদছে হিয়া আর মনে মনে উপলব্ধি করছে ” কান্না ভরা পথটা ভিজে স্বর্গ অনেক দুর, চলতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছি পথটা সমুদ্দুর। এই জীবনের কাছে আমার নেই তো কিছু চাওয়া বাসতে গিয়ে অনেক ভালো বইছে ঝড়ো হাওয়া। চাই বারে বার ভুলতে আমি কষ্ট গুলো বড্ড দামি, আর আমার কাছে আমি ভীষণ দামী ” ।।

Leave a Reply

Related Post

খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়??

খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়??খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়??

খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়?? রোজ রাতে কাজ সেরে টলতে টলতে ক্লান্ত জীর্ণ শরীরটা যখন বাড়ি ফেরে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে, ঠিক তখনই চোখ রাঙানি দিয়ে ওঠে সমস্ত না

ভালোবেসে তিস্তা নাম দিয়েছিলাম।

ভালোবেসে তিস্তা নাম দিয়েছিলাম।ভালোবেসে তিস্তা নাম দিয়েছিলাম।

ভালোবেসে তিস্তা নাম দিয়েছিলাম। “বড্ড মন খারাপ ছিল আবেশের… চা এর দোকান থেকে চুপচাপ বাড়ি ফিরে চলে এলো, তারপর আর কারো সাথে কথা বলেনি সেদিন। কি জানি কি হয়েছিল! সেই

অচেনা

“অচেনা”“অচেনা”

“অচেনা“ সময়ের অন্তরালে কতটা সব কিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব তা তো জানা সম্ভব নয় । কিন্তু কোনো জানি না আমার ব্যাক্তিগত ভাবে মনে হয় সময়ের অন্তরালে সময় যখন মানুষের চোখে