খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়??
রোজ রাতে কাজ সেরে টলতে টলতে ক্লান্ত জীর্ণ শরীরটা যখন বাড়ি ফেরে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে, ঠিক তখনই চোখ রাঙানি দিয়ে ওঠে সমস্ত না পাওয়া সপ্ন গুলো একের পর এক হেরে যাওয়া অপরিণত সম্পর্কের শব। ভিড় করে আসে পাড়ার কুকুর গুলো, আমায় চেনে তবুও সেই মুহূর্তে কেমন যেনো অচেনা পথিক আমি। এগিয়ে চলছি কোনো একটা পরিণতির দিকে, এক পা এক পা করে। হয়তো সেদিন বৃষ্টি পড়বে আর ছাতা থাকবেনা আমার কাছে, আরো একবার ভিজবো অযাচিত বৃষ্টির ফোঁটায়।।
আমি তো এখনও তোমার অপেক্ষা করি ঠিক যেভাবে স্নান এর পর শাওয়ারের তলায় মুখ টা রেখে তাকিয়ে থাকি শেষ জলের ফোঁটা টা আমার মুখের ওপর পড়া অবধি… জানোতো আমি আজও বুঝতে পারলাম না যে একটা উনিশ বছরের মেয়ের লেখায় এত আগুন থাকে কি করে ঠিক যেমন তোমার শান্ত দুটো চোখে আজ দেখছি যেটা আগে দেখে বুঝতে পারিনি। কি করে?? কি করে?? এত প্রশ্ন এত দাবি…..!
জানিনা তোমার মনে আছে কি না, আমাদের প্রথম anniversary……..!
তুমি আর আমি…. দুজনে celebrate করছিলাম ভিক্টোরিয়া বার এ, ঠিক তখনই তুমি গেয়ে উঠেছিলে ” আইহো মেরি জিন্দেগি মে তুম বাহার বানকে…. মেরে দিল মে ইউহি রেহেনা…. তুম পেয়ার পেয়ার বানকে” আমিও গলা মিলিয়েছিলেম তোমার সাথে… সব বন্ধুরা হাততালি দিতে দিতে কাপল ড্যান্স করছিল আমাদেরই মত.. । ওটা ছিল একটা দারুন দিন সারা বছরের vertuality থেকে বেরিয়ে সবাই একই তালে গান গেয়েছিলাম.. আহা! ধন্যবাদ তোমাকে ওই দিন টা উপহার দেওয়ার জন্য।
আরো অনেক কথা আছে জানোতো.. যেগুলো বলে উঠতে পারিনি শেষ অবধি তোমাকে.. ওই যে…. রতন….. ছিল না..! আরে ওই যে…. দাস পাড়ার রতন যে দুধ দিত আমাদের, সেদিন দেখা হল জিজ্ঞেস করলো তোমার কথা উত্তর দিতে পারিনি। কারণ তুমি বারন করেছ আমাকে তোমার সম্পর্কে কারুর কাছে কিছু বলতে.. বলিনি আমি। আমি দেখেছি বৃষ্টি পড়লে পাখি গুলো বাসা ছেড়ে বাইরে বেরোয় ভেজার জন্য, কিন্তু আমার সেটুকু স্বাধীনতাও ছিল না। কেনো দাওনি গো….?
সমস্যা টা তো অনেক জটিল ছিল সমন.. হ্যাঁ আজ আমি সত্যিই তোমাকে সমন বলে ডাকছি, সমনবাবু বলার সময় পেরিয়ে গেছে… তবুও ভালো রাখতে পারিনি তোমাকে.. নিজের জীবনের সমস্ত স্বপ্ন এক মুহূর্তে ভেঙে দিয়েছিলাম, একমাত্র কন্যা সন্তান হয়ে ও দায়িত্ব নিতে পারিনি আমার বাবা মায়ের তুমি চাকরী করতে দেবে না বলে। করিনি তোমার জন্যে। তবুও তোমার মনের মত হয়ে উঠতে পারিনি। ধাঁধার থেকেও জটিল তুমি, তোমায় বোঝা আমার ক্ষমতায় কুলোয়নি, তোমায় চেনা বড্ডো কঠিন। খুব জানতে ইচ্ছা করছে, ভালোবাসতে আমায়?? কোনো দিনও ?? বলতো? খুব জানতে ইচ্ছা করছে আমার… ! ভালোবাসলে কি এইরকম করা যায়?? পাশের ফ্ল্যাটের তপন জেঠুও শিউলি জেঠিমা কে ভালোবাসে.. সত্যিই বাসে। একদিন আমি তোমাকে বলেছিলাম if we fight and don’t talk, please keep all your ego aside and come back to me, I can’t bear to loosing you..! তুমি বলেছিলে…. ” রাখো তো তোমার নেকামি তোমার কাছে… আমার ওসব পোষায় না.. আবেগ ধুয়ে কি জল খাবো?? ”
নাহ্ তুমি এই সব deserve করই না .. ভুল তো আমার ছিল। জোর করে তোমাকে আমার মনের মত বানাতে চেয়েছিলাম!! আমার মনের মানুষের ছাঁচে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলাম কই !! চিরকাল মেয়েদের গায়ে হাত তোলা পুরুষদের আমি ঘৃণার চোখে দেখতাম ভাগ্যবশত এ যে আমারই জীবনের গল্প। যাই হোক আজ আর তোমার কোনো জোর খাটবে না আমার ওপর… সময় বদলেছে যে…. আর আমিও! তাই একটু একটু করে ঘুন ধরে গেছিল যে অভ্যেসটা আজ সেটা শান দেওয়ার পালা। পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরিটা করে ওঠা হয়নি কিন্তু আজ করতেই হবে আর আমি করছি।
আজকে তুমি আমার লেখা গুলো পড়তে পারছো কিনা জানিনা… কিন্তু আমি তোমার উদ্দেশেই বলছি সমন…. কোনো না কোনদিন নিশ্চয়ই তুমি পড়তে পারবে। সেদিন যেনো, ভালো আছি খুব.. তোমার জায়গা টা কাউকে দিইনি ঠিকই তবে ভালোবাসা টা মরে গেছে আমার..। জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছিলাম তোমায় …! আর যাইহোক লোক দেখানো নোংরামো টা আমার নাপসন্দ। তাই ডিভোর্স দেওয়া নিয়ে ভুরু কুঁচকে ওঠেনি তোমার। আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই সমন, একটা না অনেক গুলো….
” সপ্ন গুলো পেনাল্টি নয় যে হুমড়ি খেলেই পাবো… সপ্ন গুলো ফ্রী কিক, বাঁক খাইয়ে জালে জড়াবো ” কি?? খেয়ে গেলে তো গোল!! তবে ধন্যবাদ সমন আমায় সুযোগ টা করে দেওয়ার জন্য, “আর্কিটেক্ট ঈশারা সেন” এই ব্যানার টা বাড়ির সামনে ঝোলানোর খুব লোভ ছিল বলতে পারো। আজ সেটা বাস্তব। যতই অতীত চোখ রাঙানি দিক, দিনের শেষে নিজের সপ্নের কাছে হার মানিনি। শুধু ভেজা রাত গুলো কষ্ট দেয়। তুমি আমি বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতাম, ভিজতাম দুজনা উঠোনে, আজ সব চরিত্র কাল্পনিক লাগে এত খারাপ কল্পনা ছিল, আমার দুনিয়া কিছুটা হলেও ছেড়ে গেছে আর বাকিটা ভগবান এর ওপর। হয়তো আবার বিয়ে করেছ সুখে সংসার করছো ছেলে হয়েছে হয়তো, ও হ্যাঁ তুমি তো আবার মেয়ে পছন্দ করো না ভগবান তোমাকে হয়তো ছেলেই উপহার দিয়েছে যা আমি দিতে পারিনি। আমি চাইতাম একটা মেয়ে… ছোট্ট ফুটফুটে একটা মেয়ে, যে সারাদিন আমার সাথে খেলা করবে, আমি সাজাবো, গয়না পরাবো, সে বড় হবে, আমার জন্য যা কিনব সবটা ও নিয়ে নেবে… অন্ততপক্ষে ওর জন্যই আমার কেনা হবে। আমার শাড়ি গয়নার ওপর ভাগ বসাবে, আমাকে মায়ের মতন শাসন করবে, আদর করবে ছোট ছোট দুটো হাত দিয়ে, স্নেহ ভালোবাসায় বড় করে তুলবো আমার মতন একটা নিষ্পাপ হৃদয়কে।
আমার স্বপ্ন পূরণ নাইবা হল তোমার স্বপ্ন পূরণ হোক তুমি তোমার মতন করে তোমার ছেলেকে মানুষ করো, আমার স্বপ্ন… আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক………… আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক!!